স্টাফ রিপোর্টার।।
কুমিল্লা নগরের মডার্ন হাইস্কুলের কয়েকজন ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের মধ্যেই হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনার বিচার চেয়ে রবিবার (২ মার্চ) দুপুরে বিদ্যালয়টির ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে কয়েকজন ছাত্রী। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের মুখপাত্র জাবেদ আহমেদ ভূঁইয়া ও বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমের ইন্ধনে ছাত্রীদের হেনস্তা করা হয়।
তবে জাবেদ আহমেদ ও আবুল কাশেম অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিল বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সায়িদা সায়মা চিশতী (রোদেলা), দশম শ্রেণির ছাত্রী সাবিহা সাইয়ারা (নিয়ন), কাসপিয়া মুনতাহা (কুমকুম), উম্মে হাবিবা, নবম শ্রেণির সায়িদা সামিহাসহ কয়েকজন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সায়িদা সায়মা চিশতী বলে, ‘৫ আগস্টের পর আমাদের স্কুলের দুর্নীতিগ্রস্ত তিন জন শিক্ষককে আমরা স্কুল থেকে প্রত্যাখ্যান করি। তারা হলেন- প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক রাসেল উদ্দিন মজুমদার ও আবুল কাশেম। ৫ আগস্টের পর তিন শিক্ষকই আওয়ামী দোসরদের মতো স্কুল থেকে পালিয়ে যান। তারা বিগত সময়ে স্কুলকে জিম্মি করে রেখেছিলেন। তারা স্কুলকে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন। আমাদের আন্দোলনের কারণে প্রধান শিক্ষক তার পদত্যাগপত্র জমা দেন জেলা প্রশাসকের কাছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক রাসেল উদ্দিন মজুমদারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহতি দেন সাবেক সভাপতি। কিন্তু আরেক সহকারী প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা এখনও নেয়নি প্রশাসন।’
‘জেলা প্রশাসক স্কুলের দুর্নীতি বের করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও আমরা এখনও সেই তদন্তের কোনও ফল পাইনি’ বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করে সায়িদা সায়মা চিশতী। এই শিক্ষার্থী বলে, ‘দীর্ঘ সাত মাস পর একটি মহলের সহযোগিতায় বিনা অনুমতিতে আবুল কাশেম স্কুলে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছেন। তাকে সহায়তা করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের মুখপাত্র জাবেদ আহমেদ ভূঁইয়া। সাত মাস পালিয়ে থাকার পর জাবেদ আহমেদ ভূঁইয়ার ওপর ভর করে আবুল কাশেম স্কুলে প্রবেশের চেষ্টা করেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি জাবেদ আহমেদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একদল প্রাক্তন ছাত্র এবং গুটি কয়েক বর্তমান শিক্ষার্থী (ছেলে) আবুল কাশেমকে নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেওয়ার চেষ্টা করেন। জাবেদ আহমেদ ভূঁইয়া পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ চোরের মতো স্কুলে প্রবেশ করে নিজের চেয়ারে বসে পড়েন আবুল কাশেম। এই কাজেও তাকে সহায়তা করে মুখপাত্র জাবেদ আহমেদ ভূঁইয়া। তিনি সেদিন স্কুলে হঠাৎ প্রবেশ করে স্কুলের কয়েকজন ছাত্রীকে কাশেম স্যারের সঙ্গে সমস্যা সমাধান করে তাকে মেনে নিতে চাপ দেন। না হলে স্কুলের ক্ষতির ভয়ও দেখান। জাবেদ আহমেদ ভূঁইয়া ক্লাস ক্যাপ্টেন ছয় জনকে নিচে নামিয়ে আনেন এবং তাদের স্কুলের সবার পক্ষে কাশেম স্যারের সঙ্গে সমস্যা সমাধান করে নেওয়ার কথা বলেন। তবে আমাদের স্কুলের ছাত্রীরা তাতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে সব আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কাশেম স্যারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে মাঠে নেমে আসে। একপর্যায়ে জাবেদ আহমেদ ভূঁইয়া ও আবুল কাশেমের ইন্ধনে পাঁচ জন মেয়ে শিক্ষার্থীর গায়ে ধাক্কা দেয় কয়েকজন ছেলে শিক্ষার্থী। সেই সময় জাবেদ আহমেদ ভূঁইয়ার ১০ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত কাজের সমালোচনা করলে তিনি শিক্ষার্থীদের (ছাত্রীদের) হেনস্তা করেন এবং ছাত্রলীগ স্টাইলে হুমকি দিয়ে আসছেন। ২৫ ফেব্রুয়ারির পর তার পক্ষে অনেকে আমাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এমনকি মেয়েদের বাসায়ও ফোন দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা তাকে ছাত্র প্রতিনিধি মানতে রাজি নই।’
ছাত্রীরা যখন সংবাদ সম্মেলন করছিল, তখন বিদ্যালয় মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা জাবেদ আহমেদ ভূঁইয়া।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের এসব কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তারা একটি অভিযোগেরও প্রমাণ দিতে পারবে না। তারা যদি প্রমাণ দিতে না পারে, তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবো। মূলত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকটি গ্রুপিং চলছে। শিক্ষকদের একটি গ্রুপই ছাত্রীদের দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি ইন্ধন দিয়ে কোনও ছাত্রীকে হেনস্তা করিনি, বরং তারাই (শিক্ষার্থীরা) আমাকে হেনস্তা করেছে। তাদের এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তারা একটি মহলের ইন্ধনে আমাকে স্কুলে যোগদান করতে দিচ্ছে না।’
দশম শ্রেণির ছাত্রী সাবিহা সাইয়ারা বলে, ‘আমরা বলে দিতে চাই, মডার্ন স্কুল কোনও রাজনীতি চর্চার জায়গা না। আমরা প্রশাসনকেও ধিক্কার জানাই। সাত মাস পরও কেন মডার্ন স্কুল অস্থিতিশীল? প্রশাসনকে দ্রুত এর সমাধান করতে হবে। স্কুল প্রশাসনকে কাশেম স্যারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা হতাশা প্রকাশ করছি, পাঁচ কর্মদিবস চলে গেলেও প্রশাসন ছাত্রীদের প্রতি হওয়া অবিচারের কোনও বিচার করেনি। আমরা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপত্তা চাই।’
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page